আমাদের
ম্যাগাজিনটি হাতে তুলে নেবার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আমরা নগন্য তিনজন মানুষ এই
সংখ্যাগুলো বের করছি। আমরা বড় বড় সংবাদপত্র-ম্যাগাজিনের মত নই, আমাদের কোন বড়
বাজার নেই, নেই কোটি টাকার ব্যবসা। আমরা এসবের কিছুই চাই না।
যদিও
আমাদের ম্যাগাজিনটি কপিলেফ্ট, যদিও ম্যাগাজিনটি আমরা বিক্রি করি না, তবু নিজেরা
অল্প অল্প টাকা জোগাড় করে কষ্ট হলেও বছরে দু’বার প্রকাশের
চেষ্টা করি। শুধু চাই আপনাদের হাতে আমাদের স্বপ্নগুলো নড়াচড়া করুক।
প্রথম
সংখ্যায় আমরা কিছুটা হতাশ ছিলাম, নিরীক্ষার মত একটা বিষয়কে প্রধান করে ম্যাগাজিন
বের করার বাধাও পেয়েছি। লেখা না থাকা, লেখকদের সাথে আমাদের স্বপ্নের অমিলতা,
আমাদেরকে ভাবিয়েছে। কষ্ট পেয়েছি, কিন্তু হতাশ হইনি।
দ্বিতীয়
সংখ্যায় এসেই আমাদের সেই কষ্ট, ব্যর্থ হবার আশঙ্কা যেন হঠাৎ করেই নাই হয়ে গেল।
আমরা অনেক লেখকের নিরীক্ষা নিয়ে সাড়া পেলাম। নিরীক্ষা নিয়ে অনেক লেখকের চিন্তার
যোগাযোগ হল। আমরা টের পেলাম, আমরা ঠিক পথেই এগুচ্ছি।
আমরা
নিশ্চিত ধীরে ধীরে এই নিরীক্ষার প্রবণতা আরও বাড়তে থাকবে। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই
প্রত্যেক লেখকের লেখা শুরুই হবে নিরীক্ষায়, প্রত্যেক লেখকের যাপনই হবে
নিরীক্ষায়।
আমরা
এই সংখ্যাটি শুরু করছি বিখ্যাত শ্রুতি আন্দোলনের পুরোধা পুরুষ মৃণাল বসুচৌধুরীর
সাক্ষাৎকার দিয়ে।
শ্রুতি আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা মৃণাল বসুচৌধুরীর সাথে অনলাইন আলাপঃ দুপুর মিত্র
১.
সাহিত্যে আন্দোলন কেন প্রয়োজন ?
বিশদ
আলোচনার মধ্যে না গিয়ে সাধারণভাবে বলতে পারি প্রচলিত, গতানুগতিক সাহিত্য রচনার
বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে নিজস্ব ভূমি তৈরির প্রয়োজনেই সম্ভবত শুরু হয় আন্দোলন। রাজনৈতিক,
সামাজিক অবক্ষয়, সাম্রাজ্যবাদী, পুঁজিবাদী ধ্যানধারণা কিম্বা সাম্যবাদের উত্থান
এবং তার বিরোধিতা, এসবের মধ্যেই বেড়ে উঠছিল সাহিত্য। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে, বাজার
চলতি সাহিত্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন কিছু মানুষ। এক ধরণের নৈরাশ্যবোধ থেকে
ক্রমশই অন্তর্মুখী হয়ে পড়ছিলেন নতুন প্রজন্মের লেখকরা। অস্তিত্বের অস্থিরতায় তাঁরা
নিজেদের মত করে লিখতে শুরু করেন, আত্মঅন্বেষণের মধ্যদিয়েই সৃষ্টি করেন নতুন
সাহিত্য। ঘোষণা হয় জেহাদের। এভাবেই
আমরা বিদেশি সাহিত্যে দাদাইজম, সুররিয়েলিজম, কিউবিজম, সিম্বলিজম, ষ্ট্রিম অফ
কনসাসনেস এবং আরো সব আন্দোলনের কথা শুনেছি। পণ্ডিত মানুষেরা সে সব নিয়ে ভালো বলতে
পারবেন। প্রতিটি ক্ষেত্রেই নতুন কিছু সৃষ্টির তাড়না, প্রেরণা দিয়েছে তাদের...।
২.
আন্দোলন বা মেনিফেস্টো কি সৃষ্টিশীল কিছু দিতে পারে ?
মেনিফেস্টো
বা ইস্তাহারের মাধ্যমে আন্দোলনের রূপরেখা এবং উদ্দেশ্য জানানো হয়ে থাকে। সব
আন্দোলনের সেটাই প্রথা। কোন আন্দোলন শেষ পর্যন্ত সৃষ্টিশীল কিছু দিতে পারে কিনা সে
বিষয়ে এটুকুই বলতে পারি “পথের সন্ধান দেয় কেউ কেউ, তাকে রাজপথ বানায় কেউ
কেউ।” যে কোন আন্দোলনই সন্ধান দেয় নতুন পথের, নতুন
ভাবনার। সেই সব ভাবনা থেকেই হয়ত লেখকের অন্তর্জগতে শুরু হয় অজানা কোন সৃষ্টির
উল্লাস, এবং...
৩.
শ্রুতি আন্দোলন সাহিত্যে কি প্রভাব এনেছিল ?
‘শ্রুতি’ আন্দোলন এখন ইতিহাস। বিভিন্ন গবেষণামূলক গ্রন্থে, শ্রুতির ভূমিকা
নিয়ে অনেক কথা বলা হয়েছে। এই প্রসঙ্গে কবি উত্তম দাশ তাঁর ‘হাংরি, শ্রুতি ও শাস্ত্রবিরোধী আন্দোলন’ গ্রন্থে শ্রুতি সম্পর্কে কি লিখেছিলেন, দেখে নেওয়া যাক...
প্রয়োগ,
ফলত নতুন দ্যোতনা পেল শব্দ। শব্দের
অর্থগতরূপ দৃশ্য ও ধ্বনিতে উদ্ভাসিত হয়ে অনেক অগম্য বোধের সহায়ক হলো। আবিষ্কৃত হলো
ভাষার নতুন মাত্রা।
‘শ্রুতি’ আন্দোলনকে বলেছি ইতিহাসের অনিবার্য পরিণাম।
আবেগ-সর্বস্ব উচ্ছ্বসিত বিবৃতিধর্মী কবিতা এবং রবীন্দ্রনাথের কথাকাহিনির পরিণতিতে
কাহিনীমূলক কবিতার জঞ্জালে বাংলাভাষা যখন ঘোর আবর্তে, একদল তরুণ তখন শুদ্ধ শরীরে
উপস্থাপিত করতে চাইলেন কবিতাকে। সমস্ত অশুচিতা বাঁচিয়ে একটা শুদ্ধ শরীর। শিল্পের
ধারক ও বহনকারী। শুধু চিৎকার আর মেদবর্ধনকারী কবিতা পাঠককেও ভুলিয়েছিল। কবিতা একটা
শিল্প মাধ্যম। বাণিজ্যের পসরা নয়, কবির আত্মগত উচ্চারণের বাণীরূপ, অন্তর্নিহিত
তাৎপর্যের প্রতীক; রহস্য উন্মেষকারী, দুর্জ্ঞেয় সত্যের প্রকাশক। সূক্ষ্ম শরীর তার,
শুদ্ধ ও পবিত্র। ‘শ্রুতি’
আন্দোলনের কবিরা পরিমিত শব্দ ও বাক্যবন্ধের কবিতার সেই শুদ্ধ শরীরের উপাসক। জটিল
সময়ে বসবাসকারী অথচ আত্ম-অন্বেষক একদল কবি শ্রুতি ও দৃষ্টির সমবায়ে ভাষার এক নতুন
সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিলেন। নবজন্ম হল কবিতার। শুদ্ধ কবিতার।”
এটুকু
হয়ত বলাই যায়, বাংলা কবিতার অবয়বে যে দৃষ্টিগ্রাহ্য পরিবর্তন এসেছে,কবিতার পংক্তির
১৪, ১৮ কিংবা ২২ অক্ষরের ঠাসবুনোন থেকে মুক্তি পেয়ে অক্ষরবৃত্তও যে দৃষ্টিনন্দন
হয়ে খেলা করছে কবিতায়। কবিতার বহিরঙ্গে যে পরিবর্তন এসেছে, তার জন্য শ্রুতির
কবিদের প্রচেষ্টাকে না মানাটা অন্যায় হবে। তার্কিকরা ১৯৬৫ সালের আগে কবিতার চেহারা
কেমন ছিল এবং পরবর্তী দু’এক
বছরে তা কিভাবে হঠাৎ বদলে গেল ভেবে দেখবেন। বাংলা কবিতায় অমিয় চক্রবর্তী, সুভাষ
মুখোপাধ্যায়কে মনে রেখে শ্রুতির কবিরা যে পথ খুঁজতে চেয়েছিলেন তাকেই হয়ত আরো
সুন্দর করে তুলেছেন পরবর্তী প্রজন্মের কবিরা। এখানে আমি শুধু দৃষ্টিনন্দন করার
কথাই বলছি।
১.
কোনো রকম ব্যাখ্যা, বিধান বা তত্ত্ব প্রচারের দায়িত্ব কবিতার নেই।
২.
ব্যক্তির কল্পনায় আন্তরিক অভিজ্ঞতা বা উপলব্ধির প্রকাশের ব্যক্তিত্বের পরিমণ্ডল
রচনাই কবিতা। তাই কবিতা হবে-ব্যক্তিগত, মগ্ন এবং একান্তই অন্তর্মুখী।
৩.
ভেঙে ফেলতে হবে সমস্ত প্রকার শাসন, ছিন্ন করতে হবে সংস্কারের সমস্ত বন্ধন।
শব্দকে ব্যবহৃত বাক্যবন্ধের আবর্জনা থেকে এক এক করে বেছে নিতে হবে। তৈরি করতে
হবে ব্যক্তিগত এবং অনন্য, এক প্রচলমুক্ত বাকরীতি।
৪.
কবিতা চিৎকার নয়, নিবিষ্ট উচ্চারণ। কবিতা নির্মাণ নয়, শিল্পসৃষ্টি। কবিতা
বক্তৃতা বা প্রচার নয়, নিবিড় অভিজ্ঞতা। কবিতা বুদ্ধির চমক নয়, ব্যাকুল সন্ন্যাস।
৫.
অনুভবের অবলম্বন বিশেষ শব্দের গুরুত্ব অনুসারে তাকে অন্য শব্দের জুড়ে বা বেশি
স্পেস দিয়ে একেবারে আলাদা করে দেখানো। অথবা বিশেষ কোন শব্দকে সাধারণভাবে ব্যবহৃত
হরফ থেকে আলাদা হরফে ছাপিয়ে তার প্রতি পাঠকের মনোযোগ আকর্ষণ। কখনো বা শব্দের
প্রতিটি বর্ণকে স্পেসের সাহায্যে বিচ্ছিন্ন করে দিয়ে গানের লয়ের মতো উচ্চারণ
বৈশিষ্ট্য তৈরি করা।
৬.
ব্যাকরণের বিরোধিতা। ভাষা ব্যবহারে বাক্য প্রকরণের যুক্তি নির্ভরতার বর্জন।
শব্দকে বাক্যের অংশ বা পদ হিসাবে না ভেবে প্রতিটি শব্দকে একক গুরুত্বে ব্যবহার
করা। সংযোজক অব্যয়, ক্রিয়া বিশেষণ, বিশেষণ ইত্যাদি অপ্রয়োজনীয় ভারসৃষ্টিকারী
শব্দকে যথাসম্ভব পরিহার করা।
|
৪.
বাংলাদেশে এর কোন প্রভাব পড়েছিল কি?
সে
সময় বা পরবর্তী সময়ে দীর্ঘদিন ওপারের কোন পত্রিকা বা বই এদিকে আসতো না...তাই ঠিক
বলতে পারবো না এ বিষয়ে।
৫.
একই বাংলা সাহিত্যে অনেক খানি কাছাকাছি সময়ে হাংরি ও শ্রুতি আন্দোলন সাহিত্যে কি
এনে দিল?
‘মলয়বাবু বলেছেন আত্মার ইরিটেশন থেকে হাংরি
কবিতার জন্ম।’ ‘অস্তিত্বের অসহায়তায় নিমজ্জিত হয়ে ব্যক্তির
মধ্যে ডুব দিয়ে নিজের মানবসত্তার অর্থ খোঁজা ছাড়া আর কোন উদ্দেশ্য নেই’
এমনই বিশ্বাস ছিল হাংরি কবিদের। আবার বলি, প্রভাব নিয়ে কিছু বলার পাণ্ডিত্য আমার
নেই, গবেষকরা বলতে পারবেন। তবে সমস্ত আন্দোলনই কম বেশি কিছু দাগ তো রেখেই যায়।
প্রকাশ কাল: আগস্ট ২০১৮
৬.
ইন্টারনেট বর্তমান সাহিত্যকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে ?
ইন্টারনেট
পাঠকের কাছে পৌঁছোবার একটি সহজ উপায়। কিন্তু এত বেশি কবি-লেখকদের ভিড়ে, অধিকাংশ
লেখাই হারিয়ে যায় বলেই মনে হয় আমার... ফেসবুকে যশোপ্রার্থীদের প্রত্যাশা পূরণ হয়
কিনা জানিনা, পাঠক হিসেবে আমি কবিতারণ্যে দিশেহারা হয়ে পড়ি, ভালো কবিতা খুঁজতে
খুঁজতে ক্লান্তি এসে যায়। তবে, গুগল
পৃথিবীর সমস্ত বিষয়ের সব মণি-মাণিক্য আমাদের হাতের মুঠোয় এনে দেয়, এটাও তো পরম
পাওয়া।
৭.
সাহিত্যে দীর্ঘদিন তেমন কোন আন্দোলন চোখে পড়ছে না কেন ?
পৃথিবীর
সমস্ত আন্দোলনই সময়ের প্রয়োজনে এসেছে, প্রয়োজন ফুরোলেই শেষ হয়ে গিয়েছে...অকারণে
দীর্ঘস্থায়ী হয় না কোন আন্দোলন। নতুন দিগন্তের খোঁজে হাঁটতে গেলে যে সমর্পণ, যে
নিষ্ঠা, সময় প্রয়োজন...এই ব্যস্ত দুনিয়ায় সেটারই অভাব। চটজলদি, নগদ বিদায়ের পথেই
ভিড় বেশি। অথচ ইন্টারনেট এর যুগে যে কোন সৃষ্টিধর্মী আন্দোলন কত মানুষের কাছে
পৌঁছতে পারতো, যা আমাদের ক্ষেত্রে হয়নি।
৮.
বর্তমান সময়কে নিয়ে শ্রুতি আন্দোলনের ব্যাখ্যা কি ?
প্রচুর
কবিতা লেখা হচ্ছে, অনেক ভালো কবিতাও। তাৎক্ষণিক ভালোলাগার বাইরে দাঁড়িয়ে বলতে পারি
অসম্ভব ভালো কিছু কবিতা লিখছেন কয়েকজন। অন্যদের কবিতা স্মার্ট, ঝকঝকে। ভাষাও
অনবদ্য। তবু মনে হয় কি যেন একটা নেই। আত্ম-অন্বেষক কবিদের বেশি পছন্দ করি আমি।
৯.
আপনি নিজেকে কিভাবে শ্রুতি আন্দোলনের সাথে যুক্ত করলেন ?
আমরা
যখন কবিতা লিখতে আসি, তখন আমাদের সামনে ছিল বাংলা কবিতার দিকপালদের অসামান্য সব
সৃষ্টি। তিরিশের কবিরা তখন স্বমহিমায়। চল্লিশের কবিরা নিয়মিত লিখছেন। পঞ্চাশের
কবিরা তারুণ্যের ছোঁয়ায় বদলে দিতে শুরু করেছেন কবিতার ভাষা ও প্রকাশভঙ্গি। এ রকম
একটি কাব্যিক আবহাওয়ার মধ্যে আমাদের কাব্যজীবন শুরু। তখন আমাদের কয়েকজনের মনে
হয়েছিল কবিতার জগতে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে গেলে আমাদের অন্যরকম লেখার কথা ভাবতে
হবে... আলাদা করতে হবে নিজেদের। এমনি এক অস্থিরতা থেকে, আমরা পাঁচজন- পুষ্কর
দাশগুপ্ত, পরেশ মণ্ডল, সজল বন্দ্যোপাধ্যায়, অনন্ত দাস ও আমি শুরু করি ‘শ্রুতি’।
১৪টি সংখ্যার সবগুলির সঙ্গে যুক্ত ছিলাম আমি...
১০.
তরুণ প্রজন্ম নিয়ে আপনার মন্তব্য কি ?
নতুন
প্রজন্মের কবিরা যারা ইতিহাস ও পরম্পরা জেনে কবিতা লিখতে এসেছেন, তাদের কাছে অনেক
প্রত্যাশা। তাদের হাতেই বাংলা কবিতার উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ। তাদের ভাষা, প্রকাশভঙ্গী,
চিত্রকল্প মুগ্ধ করে আমায়। মনে হয় ওদের কলমেই দীর্ঘজীবী হবে বাংলা কবিতা।
এবার
আসা যাক কবিতায়-
কামরুল
হাসানের মতে নিরীক্ষা এজন্য
প্রয়োজন যে নিরীক্ষা ছাড়া নতুন কবিতার জন্ম হয় না। কবিতা যত ভালো হোক, তা যদি নতুন
চেতনা ও আঙ্গিক ধারণ না করে, তবে তা একই বৃত্তে ঘুরপাক খাবে, প্রচলের ক্লিশে ভরে
ফেলবে কবিতার জমিন, তাতে আর নতুন শস্য জন্মাবে না।
নিরীক্ষা
যে করে সে কেবল সাহসীই নয়, সে সৃষ্টিশীল, সে প্রত্যাখান করেছে প্রচলকে, সে
আবিস্কার করতে উদগ্রীব কবিতার নতুন দিগন্ত।
কামরুল
হাসান-এর কবিতা
বিন্যাস
দ্রৌপদীর
আঁচল এ হাওয়া
ধরে
থাকি পাঁচজন প্রবল পুরুষ।
প্রবল
আঁচল এ হাওয়া
ধরে
থাকি দ্রৌপদীর পাঁচজন পুরুষ।
দ্রৌপদীর
পাঁচজন পুরুষ প্রবল
এ
হাওয়া আঁচল ধরে থাকি।
এ
প্রবল আঁচল দ্রৌপদীর
পাঁচজন
পুরুষ ধরে থাকি হাওয়া।
প্রবল
পুরুষ এ হাওয়া
পাঁচজন
ধরে থাকি আঁচল দ্রৌপদীর।
দ্রৌপদীর
পুরুষ এ হাওয়া
পাঁচজন
ধরে থাকি প্রবল আঁচল।
প্রেম
বা জ্যামিতির কবিতা
শহর
এক আশ্চর্য জ্যামিতি;
ত্রিভূজ
সম্পর্ক কত গোলাকার পার্কে ঝরে পড়ে।
ঘন
হয়ে উঠেছে ঐ দালান ধ্রুপদ
ধূর্তের
তীব্র, সুতীব্র পিরামিড
ব্যাসার্ধ
ছাড়িয়ে বাড়ে শহর প্রাচীর।
গোলাকার
বল হাতে বালকেরা চলেছে সব
আয়তাকার
মাঠ লক্ষ্য করে
ঝাঁপায় কাঁপায় ওদের সন্ত্রাস
বালখিল্য
চতুষ্কোণ ঘিরে বিপুল উল্লাস-ধ্বনি
ত্রিভূজের
বিষম বাহুর শেষে সন্নিহিত কোণে।
আনুভূমিক
ঐ সরল পথখানি ধরে
পরিবর্তনশীল
রাশির মত গাড়ি ছুটে যায়
অভিলম্ব
ধরে গেলে নীলাদের বাড়ি
চাঁদখানি
ঝুলে আছে ত্রিমাত্রিক ভরে।
সকালে
আমি (৪,৮), নীলা ছিল (৬,৩)-এ
বিকেলে
ক্যাফেতে দুজনেই (৫,৫)
স্থানাঙ্কের
নিয়ম মেনে কফিতে দিই চুমুক
নীলা
চলে গেলে সকল স্থানাঙ্কের মূল্য হয় (০,০)।
নীলাদের
পাশের বাড়ির ছাদ তৃতীয় অক্ষ ত
আমি
যে মাঠে অস্থির হাঁটি তার দুই
বাহু ঢ এবং ণ
দুই
মাত্রা থেকে নির্ণিমেষ তাকিয়ে থাকি
তৃতীয়
মাত্রার দিকে, নীলা আজ ছাদে ওঠে কি না!
দারুণ
এক ঘনকের ঘরে আমাদের আনন্দমেলা
নিখুঁত
গোলকের বাঁকা পিঠে ক্লান্তিহীন খেলা!
যোগাযোগ
: বিপুল দাম হৃদয়, সাতানীপাড়া (বৌ-বাজার), শেরপুর সদর, শেরপুর। মোবাইল :
০১৭১০-৯২৭৭২৮,email: mitra_bibhuti@yahoo.com ম্যাগাজিনটি কপিলেফ্ট। বিক্রির জন্য নয়। এই ম্যাগাজিনের সমস্ত লেখা
কপিলেফ্ট। এই ম্যাগাজিনের যে কোন অংশ যে কেউ অবাণিজ্যিক ও অলাভজনক উদ্দেশ্যে মূল
লেখক ও লেখাকে অবিকৃত রেখে লেখক ও প্রকাশকের অনুমতি ব্যতিরেকেই নকল এবং পরিবেশন
করতে পারবেন।
মধুমঙ্গল
বিশ্বাসের কবিতাতেও নিরীক্ষার
ছাপ রয়েছে স্পষ্ট।
মধুমঙ্গল
বিশ্বাস-এর কবিতা
ভাব-বিভাব
৬.
যে-কোনও
সম্ভাবনার মাঝে একটি জ্যোৎস্নার
সিঁড়ি
শুয়ে থাকে। সিঁড়িটির মাঝখানে ভাঙা। তুমি
তাকে
অতিক্রম করতে পারো
না
কখনও। প্রত্যেক ভাদ্রে
প্রতিটি
সম্ভাবনায় তুমি যখন
সফলতা
দেখতে চাও তোমার
অন্ধকার
ঘরের বিজন অপেক্ষা
ভাঙা
সিঁড়িটির পারাপার হয়ে
ওঠে।
তোমার
শরীরে তখন অরূপের
আগুন।
তোমার সিঁড়িতে
তখন
রূপের প্রশান্তি।
৭.
আপনার
জঙ্ঘা থেকে একটা ফ্লাইওভার
চলে
গেছে আমেরিকার দিকে।
আমেরিকা
বললে
কেউ
বোঝে ট্রেডসেন্টার কেউ ফ্রি-সেক্স
সে
ভাবল এভারেস্ট
সে
ভাবল পাতাল
আমেরিকা
ভাবল, তেমন ঝড় এলে সবই সমান
ফ্লাইওভারের
নীচে অনাথ ঝুমঝুমি
কাজী
জহিরুল ইসলামের মতে
ক্রিয়াপদহীন কবিতায় ক্রিয়াপদ না থাকার ফলে কবির চেয়ে পাঠকের ভূমিকা বেশি। পাঠকের
ভাবনার দিগন্ত অধিক প্রসারিত। অনেক কথা অপ্রকাশিত এবং অমীমাংসিত প্রশ্নের সুস্পষ্ট
ইঙ্গিত রয়েছে। এতে করে পাঠক কবিতাকে নিয়ে খেলতে পারেন। কখনো কখনো পাঠক বিভ্রান্তও
হন। পাঠককে বিভ্রান্ত করা আধুনিক কবিতার একটি বড় কাজ। ক্রিয়াপদহীন কবিতায় সেই কাজ
করার সুযোগ বেশি। এটি একটি কারণ। অন্যটি হচ্ছে নতুনের অনুসন্ধান। নতুন কিছু করার
প্রয়াস। আশা করি এই নতুন প্রয়াস বাংলা কবিতার পাঠক সানন্দে গ্রহণ করবেন।
কাজী
জহিরুল ইসলাম-এর কবিতা
নির্জন
সন্ধ্যায় কোলের ওপর একটি ঝরা-ম্যাপল পাতা
এর
মধ্যে, এই একটি ঝরা-ম্যাপল পাতা, হলুদাভ, এর মধ্যে এতোকিছু!
এতো
হুলুস্থুল, এতো শৈশব, কৈশোর এতোখানি! দূরের ধুলপবন গ্রাম!
দুপুরের
বিষণ্ন
গলি, শহরতলী,
স্কুল পালানো সিনেমা হল, আনন্দ-তীর্থ, মধুমিতা কিংবা অভিসার!
অন্তরীক্ষ-যুদ্ধে
সহসা বিদীর্ণ মেঘেদের আর্তচিৎকারে প্রোজ্জ্বল
বিদ্যুৎরেখার
মতো শিরা-উপশিরা,
বর্ষার
প্রথম বজ্রপাত, মৃত্যুর উত্তেজনায় কৈ-মাছের কানকো-ভ্রমণ, দূর খাগাতুয়ায়।
অথবা
সাতাশ নদীর হঠাৎ কলধ্বনি, দিগ্বিদিক, এই ম্যাপল-মানচিত্রে,
ম্রিয়মান
আজ, লোভের পলিতে কারো কারো আত্মাহুতি,
তবুও
সেই হর্ষধ্বনি, জলবৃত্ত, শিশুদের নিজস্ব পদ্মা-মেঘনা খেলা, অম্লান, এই
ম্যাপল-রেখায়
কী
মসৃণ ত্বক, কী মসৃণ!
দূর
মধ্যপ্রাচ্যে, সেমেটিক নারীদের স্তনের স্পর্শ, গনগনে প্রেম,
আরও
কত কথা, কত, কত কিছু তার একান্ত গোপন
এই
নির্জন সন্ধ্যায় কোলের ওপর একটি ঝরা-ম্যাপল, অর্ধশতাব্দীর সঞ্চিত গুপ্তধন।
প্রায়ান্ধ
সময়
ফ্রস্টেড
দুপুর,
সময়টা
এখন প্রায়ান্ধ; বোধ-সীমার বাইরে সভ্যতা, যুক্তি-প্রযুক্তি ও প্রকৃত মুক্তি
কৃষ্ণাঙ্গ
নারীর চোখে মেঘলা আকাশ, বর্ধিত সংশয়।
ছাতার
বৃত্তের ভেতর বেয়াড়া-বৃষ্টি
আতঙ্ক,
আতঙ্ক পথে পথে, মসজিদ-রোডে, টুপি-দাড়ি, বিশ্বস্ত জায়নামাজে।
সন্ধ্যার
সুবর্ণ ক্লান্তি অভিবাসী পায়ে, লক্ষ্যহীন দৃষ্টির আঘাতে ক্ষত দ্বিধার দেয়াল।
জেএফকে’র
টার্মিনালে তবুও প্রতিদিন ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ-মৃগেলের ডাউনলোড,
এশিয়া,
আফ্রিকা, ল্যাটিন ও পূর্ব-ইওরোপের হামাগুড়ি, পাগলা হাবুবের মতো জনস্রোত।
ফ্রস্টেড
দুপুর, প্রায়ান্ধ সময়;
এক
চিলতে বিকেল, অনাগত, গাবানি-ডোবার ঘোলা জল;
এরপর,
এরপর সন্ধ্যা, প্রগাঢ় অন্ধকারের দূত, এই অদ্ভুত শহরে।
সূরজ
দাশের মতে দুর্বোধ্যতার উৎস
অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কবিতা নির্মাণের পরিকাঠামোগত পরীক্ষা- নিরীক্ষা। কবিতাকে
দুর্বোধ্য করে নয়, পাঠকের সঙ্গে খুব সহজ সরল উচ্চারণ দিয়েই পৌঁছাতে চায়। অযথা কবিতাকে দুর্বোধ্য করে তুলতে প্রবল অনীহা
তার। এটা তার একেবারেই না পছন্দ। জীবনযাপনের তীব্র বেদনাবোধ, মৃত্যু নিয়ে নিজস্ব
চিন্তার অভিঘাত মানুষকে যেভাবে বিচলিত করে তেমনিভাবে তাকেও খুব নাড়া দেয় এমন সব
সাধারণ বিষয়। এসবই খুব সহজ করে সাধারণ
মানুষের মুখের ভাষায় ফুটিয়ে তুলতে চায় তার লেখায়। এসবই পরীক্ষা-নিরীক্ষা তার কবিতা
যাপনে। কবিতায় জীবনবোধ, নৈরাশ্য, বিষণ্নতা, সময়কে অতিক্রম করে সমাজের চলমান
জীবনযাত্রার সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে নিতে চায় গভীর অনুভবে। পথ চলার গভীর প্রত্যয়ে
জীবনকে গড়ে নিতে চায় নতুনভাবে, কবিতার শরীরে সেসবই গাঁথতে ভালোবাসে বরাবর। ইতিহাস,
লোকায়ত জীবন, গ্রাম-বাংলা, সময়-চেতনা, এইসবই জীবনের মগ্নতায় শাশ্বত পথের সন্ধানে
কবিতায় ধরবার চেষ্টা করে।
সূরজ
দাশ-এর কবিতা
জ্যামিতিক
হাওয়াঘর
দুপুরের
গ্রীল বারান্দা ছুঁয়ে
উড়ে
যায় আকাশ বাউরি
নিশ্চয়তার দিকে
মেঠো
রাস্তার পাশে স্বাভিমানি মহীপাল
আপোষে
অস্ত্র শানায় যুদ্ধের
শ্লেষ-আশ্লেষে
হেঁটে যায়
জ্যামিতিক
হাওয়াঘর
গ্রাম
থেকে অন্য গ্রামে
তখনও
আসেনি এই কান্নাকাটি
ভুল
বোঝাবুঝি, শুরু হয়নি
কাঁচের
বাক্সের ভিতর পরস্পর
জড়িয়ে
মরিয়ে হিংসাত্মক খেলা
ছুমন্তর
মানুষেরা তখন সূর্যমুখী রোদ মেখে
ঘণ্টা
বাজাতই, খন ভাওইয়া হতো পীরের দরগায়
দেখা
যেত বাল্যকাল
ফেলে
আসা শিবসমুদ্রম
সুসময়,
অরণ্যের পারাপার
আততায়ী
ফুল
তোমার
গামলাভর্তি দুপুরগুলো মাঝেমধ্যে বেড়াতে আসে এখানে
আগলে
রাখা এই ব্যক্তিগত ভিজে কাপড়ের নৌ যুদ্ধে তুমি ওদের পাঠাও
ওরা
ছুঁয়ে থাকে আমার গৌরাঙ্গ... আমার মেখলিগঞ্জের সুপারি ...
পছন্দের
রাস্তা ছুঁয়ে এই যাতায়াত... তর্কদের বাড়ি থেকে দূরে থাকো
আকস্মিক
কোনও যোগাযোগ না হলে এখানেই ফোটে তখন আততায়ী ফুল
তুহিন
তৌহিদের মতে নিরীক্ষা নতুন
কবিতার জন্ম দেয়। প্রচলিত ধারার বাইরে নতুন কবিতা লেখার চেষ্টাই নিরীক্ষা। একজন
কবির সব কবিতা নিরীক্ষাধর্মী নয়; তবে অধিকাংশ নিরীক্ষাই নতুন কবিতা। স্পন্টেনিয়াস
বা স্বতঃস্ফুর্ত কবিতার চেয়ে নিরীক্ষা একটু আলাদা। তার কাছে নিরীক্ষা এক ধরণের
সচেতন কবিতা। তবে দীর্ঘদিনের চেষ্টায় নিরীক্ষাও স্বতঃস্ফুর্ত হয়ে উঠতে পারে।
গতানুগতিক কবিতার ভাষা, আঙ্গিক থেকে মুক্তির জন্য নিরীক্ষা প্রয়োজন। নিচের
কবিতাগুলোতে নিরীক্ষার চেষ্টা করা হয়েছে। বিবেচনা পাঠকের...
তুহিন
তৌহিদ-এর কবিতা
নেকড়েটা
ভেতরেই আছে
Protect yourself from your own thoughts ÑRumi
১.
ভেতরের
খরস্রোতা নদীকে ডরাই
ঝোঁপের
আড়ালে থাকা নেকড়েটা নিয়ে যত ভয়
নেকড়েটা
ভেতরেই আছে
ভেতরেই
আছে নেকড়েটা
নেকড়েটা
আছে ভেতরেই
নিজেকে
সুরক্ষা দাও তার কাছ থেকে
ঝোঁপের
আড়াল থেকে উঁকি দেবে, দেখে নেবে কতটা সতর্ক তুমি। খেয়াল হারালে
খেয়ে
ফেলবে সে
নেকড়েটা
ক্ষুধার্ত, লোলুপ
নেকড়াটা
ছল ধরা জানে
দৃশ্যত
গোলাপ ফুল অগণিত ফুটে আছে, যেন
ব্যাবিলনে
ঝুলন্ত উদ্যান
ধরতে
গেলেই হবে লোমশ শরীর
নেকড়েটা
ভেতরেই থাকে আমৃত্যু ঘাপটি মেরে
ঝোঁপের
আড়ালে
দেখে
নিও, নয়তো সে তোমাকেই দেখে নেবে
হয়ো
না পাগলা ঘোড়া, ঝড়ের বাতাস
আত্মঘাতী
সুখমুগ্ধ মেফিস্টোফিলিস
ফস্টাস,
ফস্টাস, নেকড়েটা ভেতরেই আছে
সুযোগ
খুঁজে সে, আততায়ী অন্ধকারে গর্জে ওঠে
তখন
তোমার মাঠে ছড়ায় না আমলকিরোদ
‘মিস্টার
ক্যুর্জ ইজ অ্যা রিনাউন্ড ম্যান’
৩.
হারতে
এসেছো, তার দুর্নিবার হাতে
এসেছে
কি বেকুব শিকার হতে?
দুর্গম
পর্বত, ঝোঁপঝাড়, পাথরের গুহা
কালোপর্দা
ভেদ করে তীক্ষ্ণ-দৃষ্টি তোমার দিকেই
ঝলসানো
চোখ, যেন
আগুন
থেকেই তার জন্ম হয়েছিল
সে
বড় নাছোড়
সহজেই
তার সাথে পারবে না
সহজেই
পারবে না তার সাথে
নিজেকে
সুরক্ষা দাও, দৃঢ় হও, নির্মোহ হও
চারপাশে
গড়ে তোলো দুর্ভেদ্য দেয়াল
যেন
না আসতে পারে টপকে, মাড়িয়ে
ওথেলো,
ওথেলো
কাকে
তুমি হত্যা করে ফেলো!
নেকড়ের
চেয়ে বেশি হিংস্র সেই নেকড়েটা ভেতরেই আছে
জোগান
হয়ো না তার ক্ষুধ-পিপাসার
সম্পাদনা
পর্ষদ : রবিন পারভেজ, বিপুল দাম হৃদয়, দুপুর মিত্র।
|
রাজীব
দত্তের মতে একটি কবিতা
কবিতা-ই। সে হয় সার্থক, নয় ব্যর্থ। অথবা, সে কবিতায় নয়। পাঠক তাঁর ভিন্ন ভিন্ন
রুচি আর অর্জিত ধারণা অনুসারে তাকে বিশ্লেষণ করে নেন, নিজের মতো করে। একজন কবিতা
লিখিয়েকে এ ব্যাপারে নির্দেশ না দেওয়াই ভালো। দেখা যায়, আমরা একটি মানুষকেও এই
ভাবেই বিচার করে থাকি এবং নিজের যুক্তির স্বপক্ষে নানান উদাহরণ টেনে এনে নানান
গাণিতিক কাটাকুটি করে থাকি। কারণ সাধারণ বিচারবুদ্ধিতে আমরা বিশ্বাস করি বিজ্ঞান
সত্য এবং বৈজ্ঞানিকভাবে পরীক্ষিত যা তাহা ‘ধ্রুব সত্য’। আমরা ভুলে যাই বা জানার
চেষ্টা করি না ধ্রুব সত্য বলে কিছুই হয় না। ভুলে যাই আপেক্ষিকতাবাদের বা তারও
পরবর্তী কোয়ান্টামতত্ত্বের অনিশ্চয়তার কথাগুলিও। স্কুল জীবনে জীব/ভৌত বিজ্ঞানের
ক্লাসে কোন পরীক্ষা করার সময় বা বীজগণিতের সমাধান করার সময় যে পদ্ধতিগুলি অবলম্বন
করতে হত সেই ফর্মকে এই কবিতাটির (বক্তব্যকে যথাযথ ভাবে ফুটিয়ে তোলার জন্য)
নির্মাণে ব্যবহার করা হয়েছে মাত্র। সেই অর্থে একজন পাঠক একে ম্যাথম্যাটিক্যাল
পোয়েট্রি বা প্রতিবাদের কবিতা বা আপাদমস্তক একটি সাধারণ কবিতা- যা খুশি ভাবতে
পারেন। আমি বাদুড়ের ন্যায় উলটোদিকে লটকে- নিরবই থাকব।
রাজীব
দত্ত-এর কবিতা
একটি
‘স্বর্গীয়’ সমাধান অথবা তামাশা
পরীক্ষা
ধরে
নেওয়া যাক :
মানুষটি
মৃত।
বিশ্বাস
করুন:
মানুষটি
মৃত।
বস্তুত:
মানুষটি
মৃত
॥ - ১নং দোষীকরণ।
...
ধরে
নেওয়া যাক :
ও
পাখি হবে না।
বিশ্বাস
করুন:
ওর
ডানার উড়ান ক্ষমতা শূন্য
ওর
ঠোঁটে নেই চঞ্চুর কৌণিক কঠোরতা
ওর
পাঞ্জাতে নেই নখরের শক্ত জ্যা
বস্তুত:
লিমিটেশনের
সূত্রানুযায়ী ওর চক্ষু যুগলেও
নেই
নীলিমার
স্পর্ধা ॥ - ২নং দোষীকরণ।
পর্যবেক্ষণ
(১নং
ও ২নং দোষীকরণকে সংযুক্ত করে পাই)
এবং
লক্ষ্য করুন
বোঝাতে
চাইছে
সে
আসলে জীবিত।
এবং
কি আশ্চর্য মানুষ পক্ষী = মৃত
পক্ষী মানুষ
হাসি
মুখে মৃতটি
সকলকে
বিশ্বাস করাতে চাইছে
আসলে
সে জীবিত।
অতএব
মহাশয়/মহাশয়া,
পর্যবেক্ষণ
শেষে
(জীবিত-
) মৃত অথবা মৃত ( - জীবিত) মানুষটিকে
বাঁদুরের
ন্যায় আমি
লটকাইয়া
দিলাম...
সিদ্ধান্ত
অতএব
মহাশয়/মহাশয়া,
অ্যাপ্লায়েড
ম্যাথে অরিজিন অব স্পেসিসকে ইনজেক্ট করে
আমরা
এই সিদ্ধান্তে এসে উপনীত হলাম
নট
নড়নচরন লটকানো মানুষটি
অবশেষে
মৃত।
অর্থাৎ স্বর্গীয়
পোয়েটিক
জাস্টিসে
কনসোলেশন
প্রাইজ স্বরূপ
উহার
জন্য বরাদ্দ থাক
এক
টুকরো
তামাশা।
(অথবা
জুকেনবার্গীয় ভার্চুয়েল ওয়াল)
সৈকত
ধারার মতে এই ফর্মে কবিতা
লেখার ধারাবাহিকতা তার নেই। যেখানে বিজ্ঞান ও বাস্তবতার সরলতা প্রকাশে ভাবিত হওয়া
অথবা আধো ভাবিত না হয়ে বলে দেয়া ফিলসফি বিবর্জিত। যদিও কবিতা লেখার ক্ষেত্রে
প্রচ্ছন্নভাবে এক বা একাধিক ফিলসফিকে কেন্দ্র বা বিকেন্দ্র করা হয়। এই লেখাগুলোতে
সে চেষ্টা করা হয়নি। এখানে ভাবনার গভীরতা থেকে ফিরিয়ে বৈজ্ঞানিক সত্যকে আক্ষরিক
অর্থে ঠুকে রাখার চেষ্টাই করা হয়েছে। অথবা প্রকৃতির জীবনাচার সেও চর্চাবহুল রূপ
নিয়েই হাজির এসব কবিতায়। হয়তো একটু চিন্তা করলেই স্পষ্টতার রূপ পরিগ্রহ করে। যেমন,
‘মার্কেজ’ শিরোনামে কবিতাটিতে দেয়ালের
ভেতর লুকিয়ে রাখা হাড়ের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। তার ‘শতবর্ষের
নিঃসঙ্গতা’ উপন্যাসের একটি চরিত্র যে কাজটি করতেন। আর
দেয়ালের ভেতর হাড় মানে তো এর কাঠামো বা দেয়ালটির ভিত্তি বা একটি জগৎ নির্মাণের
এইরূপ বাস্তব প্রকৌশল।
সৈকত
ধারা-এর কবিতা
কবি
ও কাক
‘কা কা করা’
অর্থে কবিকে কাকের সঙ্গে
তুলনা
করার নেতিমূলক কথা জারি থাকলেও
সর্বভোরে
ডেকে উঠা পাখিটার নাম কাক।
নিশ্চয়ই,
একটা দিনের শুরুর ঘোষণাপত্র রচনা করে এই কাক।
পাখি
ও আঁখি
মানুষ
মূলতঃ পাখি।
পাখিরও
থাকে গরুর চোখের মতন আঁখি।
মুখোমুখি
সূর্যের
মুখোমুখি দাঁড়ালো গিয়ে চাঁদ!
আর
তোমরা বলছো আজ অমাবস্যা।
তীর
দাঁড়িয়েছিলাম
তোমার তীর ছোঁড়ার বিপরীতে।
অথচ
পৃথিবী প্রদক্ষিণ করে সেই তীর বিদ্ধ হলো আমাতেই!
পাথর
পাথর
আজ তোমাদের কাছে কাঁদছে।
তবুও
তোমরা তার উপর দাঁড়াতে পার;
কিন্তু
মুখ লুকিয়ে নয়।
মার্কেজ
দেয়ালের
ভেতর লুকিয়ে রাখা হাড়!
ইহা
কোনো যাদুবাস্তবতার গল্প নয়,
পৃথিবী
নির্মাণের জমকালো প্রকৌশল!
ইকতিজা
আহসানের মতে গল্পের নিরীক্ষা
মূলত কী- এই প্রশ্ন নিয়ে ডানে বায়ে বহু হেঁটে অবশেষে যে পথের দেখা পেয়েছেন তার
পরতে পরতে ছড়ানো রয়েছে শৈলী নামক এক শৈল্পিক প্রপঞ্চ। আর শৈলী নিয়ে ভাবা মানেই
আপনি আপনার গল্পটি বলার জন্য নতুন ভঙ্গি খুঁজছেন। যদি শেষ পর্যন্ত আপনি নতুন
ভঙ্গিতে বলতে পারেন, তবেই আপনি নিরীক্ষাপ্রবণ লেখা লিখেছেন বলে আপনি ধরে নিতে
পারেন। নিরীক্ষা বলতে তো প্রাথমিকভাবে এই
বুঝি....
ইকতিজা
আহসান-এর গল্প
রাষ্ট্র;
রিক্সা ও তোমার পায়জামার নীচে ইঁদুর
ক.
তোমার পায়জামার নীচে ইঁদুর; কেন্দ্রাভিমুখী টানে :
তারপরও তোমার পায়ের নখ সম্পূর্ণ আছে পূর্বে মতো-ই; এমত
ভাবনায় প্রথমত জারিত হয়ে তৃপ্তিমনে আবার নখের দিকে তাকিয়ে-ই চমকে ওঠো তুমি। নখের
কোণায় চামড়ার পাশে সূক্ষ্ম ফাঁক গলে প্রবেশপথের ছিদ্র হা করে আছে কিন্তু
ক্ষুদ্রতার চরম অনুতে তার অবস্থান। তারপর ব্যথার অনুভূতিও তোমার ভেতরে সংক্রমিত
হয়। তেলাপোকা সংক্রান্ত এইসব ভাবনা তোমার মনে ফাঁক বুঝে সাই-সাই ঢুকে যায় আজকের
ইঁদুরের সাথের সিকোয়েন্সটার তাৎপর্যপূর্ণ সমাপ্তিতে। শেষপর্যন্ত ইঁদুরের উষ্ণতায়
তুমি স্বপ্নবান হলে। ঘুমের মাঝে কল্পিত শিহরণে যখন ভেঙে যায় সবকিছু তোমার ভেতরে
প্রবিষ্ট হয় ইঁদুরের স্বপ্ন। ইঁদুর প্রথমত তোমার পায়ের কাছে গিয়ে থমকে দাঁড়িয়ে
ভাবে, এইখান থেকে শুরু করা যাক পুরুষোত্তর-ইঁদুরিত জননেন্দ্রিয়ের চরমতম খেলা। প্রথমে
হেয়ালি ভেবে তুমি নঞর্থক কোন চিহ্নাদি প্রকাশ
না করলে; সে জড়িত হয়ে যায় ক্রমান্বয়ে তোমার
আচার-আচরণে; শপিংয়ে; সূক্ষ্মতালে জমে ওঠা আবেগে আলাপে ও তোমার বিভিন্ন প্রয়োজনে।
এর মাঝে ভদ্রস্থ মানব সমাজে তার ইঁদুর সংশ্লিষ্ট যাবতীয় পরিচয়াদি গোপন করতে করতে
সে অজান্তেই আবার মূর্ত হয়ে ওঠে ইঁদুরিক প্রযোজনায়। তেলাপোকার নখকাটার স্মৃতি
ততদিনে ডুবে গেছে অতলতার শেষ সীমায়। যদিও জুতোর ঘষায় অথবা কোন কোনদিন একটু টাইট
জুতার ঘর্ষণে বুড়ো আঙুলটায় ব্যথার অনুভব হলেও; এইসব সামান্য ব্যথা জুতা-সংশ্লিষ্ট
ভাবনাদি ছাপিয়ে তোমার মনে তেলাপোকা সংক্রান্ত টানা-পোড়েন তুলতে পারেনি কখনও। অবশ্য
প্রথম যেদিন ইঁদুর প্রবেশ করে দৃশ্যে; অবশ্য-ই স্বপ্নে নয় কারণ তুমিও বিশ্বাস করো
সে কোন স্বপ্নের দৃশ্য হতে পারেনা; তুমি হেসেছিলে ও বিস্ময়াভিভূত হয়েছিলে এই ভেবে
যে, কিভাবে পাকা বাড়ির পাশে মাটিকে ক্ষুদ্র গোলের উপর চৌকো আবরণ দিয়ে ইঁদুর তার
বাসা থেকে বের হচ্ছে। এবং যদিও আশেপাশে ধানক্ষেত নেই; তবু খাদ্য-সংস্থানের
পর্যাপ্ত যোগানের যথেষ্ট প্রতুলতা বিদ্যমান। ফলে ইঁদুরের এই দৃশ্যে প্রবেশ তোমাকে
স্পষ্টত-ই কৌতূহলী করেছে। স্বপ্ন ও খেলা আকাক্সক্ষী তুমি; অন্য অনেকের সাথে খেলতে
গিয়ে আনাড়িপনার চূড়ান্ত প্রকাশে এবং শেষ পর্যন্ত নিজের কাছে নিজেকে অব্যাখ্যাত এবং
অস্বচ্ছ রাখার বিশেষ যাতনায় যখন রোমকূপগুলোও ভেতরের আবহমান অনিবার্য চাহিদায় ফুসে
ওঠেছিল-তুমি ইঁদুরমগ্ন হলে। তোমার
পায়জামার নীচে সেই থেকে ইঁদুর মসৃণ রাস্তা পেয়ে প্রথমে ভড়কে গিয়ে-ই টের পায়; এক
নতুন ওয়ান্ডারল্যান্ডে তার আগমন ঘটেছে; যেখানে মাটি খুড়ে পূর্বের ন্যায় বাসা
বানাতে না পারলেও; এক সুন্দর ছিমছাম ঝোপঝাড়ময়-বাসা বাড়িতে রান্নাঘরে অন্ধকারে হানা দেওয়ার সময়
মাঝে মধ্যে যেমন মিষ্টির হাড়ির মতো রসময় অনুভূতির দেয়াল ঘেরা বাসা এখানে রয়েছে। যদিও
ইঁদুর পায়জামার নীচে ঢুকে-ই কেন্দ্র চিনতে পারেনি। তবুও কেন্দ্রাভিমুখী এক
অনিবার্য টানে ঠিক-ই রাস্তার পাড় ঘেষে দিক হারিয়ে ফেলেনি। ফলে ইঁদুরীয় ভাষায় তুমি
স্বপ্নবান হয়ে উঠলে। তোমার স্বপ্নে বাস্তবে পায়জামার নীচে এখন ইঁদুরের আনাগোনা।
সেইসব ইঁদুর যাদের লাগাম কখনও আয়ত্তে থাকেনা। সময়ের এই পুঁজিময় ও ভোগবাদী ইঁদুর
তোমার পায়জামার নীচে কেন্দ্রাভিমুখী টানে গতিশীলতার শিরোনামে প্রাচ্যদেশীয়
মঞ্চনাটক ‘কইন্যা’য়
তোমাদের দেখা পাওয়া যায়।
খ.
রিক্সার স্পোকের অনন্ত ঘূর্ণন :
রিক্সা
যে তখনও চলছে আমি জানতাম না। বোঝা না-বোঝার মাঝামাঝি তোমার সাথে সম্পর্কটাকে আমি
ছেড়েই দিয়েছিলাম নিয়তির হাতে। তবুও সমাজের ব্যক্তিদের কারও কারও জন্মদিন থাকে;
কারও কারও হাতে টাকার অফুরান যোগান থাকে। আর টাকার শক্তির কাছে আমরা সকলেই যে
নস্যি সে তো জ্যামিতির প্রমাণিত সম্পাদ্য। কিছুদিন থেকেই তোমার ভেতরে ধরি মাছ
না-ছুঁই পানি; এই কৌশলে কার্যোদ্ধারের যে চোর চোর অথবা বলা যায় আত্ম-লুকানো যে
প্রচ্ছদ দেখা দিয়েছিল, সেটাকে গ্রাহ্যে না এনেও অগ্রাহ্যে কখনও রাখতে পারিনি। এবং
নির্ভরশীলতার গল্পে সেই সব পুঁজিময়পূঁজগন্ধয়ালা অথবা তোমার দৃষ্টিতে
পুঁজিময়সুগন্ধয়ালা এবং ব্যক্তিত্বসম্পন্নয়ালাদের কেউ যখন কেন্দ্রিয় চরিত্র হয়ে ওঠে
এবং তোমার মোবাইলে যখন রাত-বিরাতে তার কণ্ঠস্বর শোনা যায়...রিক্সার অনন্ত ঘূর্ণনের
চিত্র বার বার চলচ্চিত্রের দৃশ্যের মতোই ভেসে উঠতে থাকে। যদিও রিক্সা চলা শুরু
করার পটভূমি একটা ধারাবাহিক প্রক্রিয়াতেই তৈরি হয়ে গিয়েছিল। জন্মদিনের সেই
বোরহানীসন্ধ্যায় তোমার রাজধানী সাজের উজ্জ্বল মুখের ভাষা আমাকে একটি সূত্রতে উপনীত
হতে সাহায্য করেছিল। যদিও সেই সূত্রতে সম্পূর্ণ আস্থা আমি তখন পর্যন্ত স্থাপন
করিনি। কিন্তু দেখো, ঢাকা শহর কত ছোট! এ শালা নিশ্চয়ই ষড়যন্ত্র! বিশ্বায়ন! মাগার পৃথিবী
খিইচ্চ্যা আইবার লাগছে! না হয়, তোমরা দুজনে নিরিবিলি একটা জায়গায় মনের মাধুর্য ও
আবেগ মিশিয়ে কিছু সময়ের ভাগ কেন পাবে না। কেন মঞ্চ নাটক উপভোগেও ঢুকে পড়বে উটকো সব
অনাকাক্সিক্ষত টিকটিকি সদৃশ চরিত্র। কেন তুমি ভড়কে না-যাবার চেষ্টায় অসম্ভব সাফল্য
পেলেও; পুঁজিময়পুঁজগন্ধয়ালা তোমার দৃষ্টিতে পুঁজিময়সুগন্ধয়ালা জাকজমকভাবে জন্মদিন
পালন করা বন্ধু ভড়কে গিয়ে নানান অজুহাতে সদ্য প্রেমে পড়া কিশোরের মতো ক্যালাসনেস
বয়ে আনবে নিজের মুখমণ্ডলে। আর তখন থেকেই আমার সম্মুখে বন্ধুদের
রহস্যময়তা....রিক্সা আর থামেনা, বন্ধুদের হেয়ালি- সুরঞ্জনা, ঐখানে যেওনাকো তুমি। আর আমার
প্রথমভাগে নিশ্চুপ বোকা বনে যাওয়া থেকে গাধায় পর্যবসিত হওয়ার আগেই আমি টের পাই,
রিক্সা তো ঢাকা শহরে একটাই চলছে। যেটা চলা শুরু করেছিল রাত দশটায়...গুলিস্তানের
সিদ্দিক বাজারের স্টার হোটেলের সামনে থেকে...সেই রিক্সা আজ জন্মদিনের পরেরদিন এখন
রাত সাড়ে-দশটা; এখনও চলছে। হা ঈশ্বর! রিক্সা চলছে। আমার পাজরের উপর দিয়ে রিক্সা
ঢাকা শহর ঘুরে বেড়াচ্ছে। যদিও সে রাতে আমার ঘুম আর স্থির থাকেনি।
আমি রিক্সার স্পোকের সাথে নিজেকে বেঁধে নিয়ে চোখ মেলে
দেখেছি, তুমি আমার প্রেমিকা; নিশাচর এডাল্ট খুনসুটিতে অন্যের আদরে নিজেকে খুলে
দিচ্ছো। আর ঢেউয়ের মতো ফুলে ফুলে আরও আদরে;
আরও
কামে ডুবে যাচ্ছো...ডুবিয়ে নিচ্ছো তাকেও।
গ.
রাষ্ট্র ও তুমি :
আমি
লাল কালীতে সব সময় ‘রাষ্ট্র’ শব্দটি লিখি আর কালো কালিতে
তোমার নাম লিখতাম। আমার জন্ম থেকে আমি রাষ্ট্র দেখে এসেছি। শুনেছি খুব পবিত্র ও
জনগণের সেবক রাষ্ট্র আমাদের সবার জীবনের জন্য খুব প্রয়োজনীয় উপাদান। শুনেছি
রাষ্ট্র ছাড়া একটি জীবনের পূর্ণাঙ্গতা আসে না। শুনেছি আমার বড় ভাইয়েরা তাদের জীবন
দিয়ে যুদ্ধ করেছেন একটি পৃথক রাষ্ট্রের জন্য সেই ১৯৭১-এ। আমি আব্দুর রহিম জন্মের
পর যতবার নিজের নামটি শুনেছি ততবার শুনেছি আমার রাষ্ট্রের নাম ‘বাংলাদেশ’।
শুনেছি দেশ নাকি মায়ের মতো মমতাময়ী। আমি রাষ্ট্রের কথা শুনে শুনে আমার বড় হওয়ার
সাথে সাথে রাষ্ট্রের বড় হওয়ার ধাপগুলোও শুনেছি। শুনেছি এ রাষ্ট্র ফজলুল হক;
সোহরাওয়ার্দী; মওলানা ভাসানী; শেখ মুজিব-এই
নামের একেকটি খুঁটির উপর দাঁড়িয়ে আছে। আমি ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের কথা শুনেছি।
শেখ মুজিব গ্রেফতার হওয়ার পর আমি মুক্তিযুদ্ধে তাজউদ্দিনের ভূমিকার কথাও শুনেছি।
আমার চাচার নিখোঁজ হওয়ার কাহিনী শুনতে শুনতে ‘৭১
এর একটা সম্পূর্ণ চিত্রই আমার মনের পর্দায় ভেসে ওঠে। আমি যা বোঝার ‘৭১
সম্পর্কে বুঝে নিয়েছি। আমার যুদ্ধ ফেরত পঙ্গু মামা একটি ভেঙ্গে যাওয়া হাড়ির
ভগ্নাংশ আমাকে ছোটবেলা থেকে দেখিয়ে এসেছে। তখন কিছুই বুঝিনি; এখন কিছু কিছু বুঝি।
মনে হয় ভেঙ্গে যাওয়া হাড়িটি আসলে ভেঙ্গে যাওযা স্বপ্নের প্রতীক। সিরাজ সিকদারের
গল্পও শুনতে হয়েছে আমাকে। আর নায়কের প্রতিশব্দ খলনায়ক শব্দটি কিভাবে একটির ভেতরে
অন্যটি অভিযোজিত হয়ে যায় এই প্রথম আমি বুঝতে পারি। আমি রক্ষীবাহিনীর দেশরক্ষার
কাহিনীগাঁথা বৃদ্ধ পাড়াত-দাদুর মুখে শুনে শুনে বুঝে ফেলি তার হারানো ছেলেটিকে
রক্ষীবাহিনীই ধরে নিয়ে রক্ষা! (গায়েব অর্থে) করেছিলেন জীবনের হাত থেকে। এরপর আমাকে
শুনতে হয়েছে ৭ই মার্চের সেই শ্রেষ্ঠ কবিতা’র প্রণেতার স-পরিবারে করুণ মৃত্যুর কথা।
এরপরের সামরিক শাসকদের নিষ্ঠুরতার কাহিনীগাঁথা শুনতে শুনতে শোনা হয়ে গেছে তাদের
কীর্তিগাঁথাও। কর্নেল তাহেরের মৃত্যুর সাথে সাথে তার স্বপ্নের মৃত্যুও রাষ্ট্রের
লোকের মুখে মুখে ছড়িয়ে আছে। মীর জাফর শব্দটির অর্থ-প্রয়োগের সাথে সাথে সেই
রাষ্ট্রনায়কের সামরিক উর্দির খাল-কাটা পোশাকও আমার চোখে ভেসে ওঠে। পরবর্তী নয়
বছরের ঝরে যাওয়া নূর হোসেনদের আত্মহুতি আমি মফস্বলের এক নিম শহরে বসে শুনেছি;
মনশ্চক্ষে দেখেছি এবং ডিসেম্বরে বিজয় মিছিলে আমিও ছিলাম। এরপরের গণতন্ত্রের ঢোলও
আমি দেখেছি। ঢোলের ভেতরে যেমন ফাঁপা রাখতে হয় বাজনার সুবিধার্থে...হায় ঢোল
গণতন্ত্র! রাষ্ট্রকে নিয়ে জুয়া খেলার তাস সব সময়ই ছিল অন্য হাতে। ফলে যে আব্দুর
রহিম আমি নিজের নামের সাথে বাংলাদেশ রাষ্ট্রটিকে মিলিয়ে গুলিয়ে ফেলেছিলাম, আজ আমার
মনে হয় রাষ্ট্র মানে হল সাধারণ মানুষের রক্তপাত। আর কিছু দেশীয় অভিজাত এজেন্টের
চক্রাকারে ক্ষমতায় আরোহণ। আর এই সাধারণ মানুষের রক্ত ছাড়া রাষ্ট্রের পিপাসা মেটে
না ফলে কিছু কিছু সাধারণ মানুষকে মরতে হয়...মরতে হবেই।
ফলে
রাষ্ট্রের কথা আমি সব সময়ই লাল কালিতে লিখি। আর আমি আব্দুর রহিম সাধারণোত্তর
সাধারণ রাষ্ট্রের থেকে ২০০ গজ দূরে থাকার আপ্রাণ চেষ্টায় সব সময়ই নিজেকে নিয়োজিত
রাখি। ফলে বৃক্ষের আড়ালে আড়ালে ও ছায়ায়-মায়ায় থাকতে থাকতে তোমার সাথে শিউলী তলায়
আমার দেখা হয়ে গেলে পাজরের হাড়গুলো খুলে তোমাকে উপহার দিয়েছিলাম আর নিজের খণ্ডিত
মস্তকও হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম তোমার জন্য। তুমি আমার উপহার স্মিত হাস্যে সাদরে
গ্রহণ করলে। আর দ্যাখো কি অদ্ভুত পরিহাস আমি বুঝতে পারিনি, বুকের পাজর ও মস্তকহীন
আমি কিভাবে তোমার সাথে মিলিত হব! আর তুমি আমার পাঁজর ও মস্তক তোমার শোকেস সাজিয়ে
পুঁজিময়পূঁজগন্ধয়ালার সাথে অনন্ত রিক্সার আরোহী। যদিও নিজের নামটির সাথে আমি তোমার
নামটিও এমনভাবে মিলাতে শুরু করেছিলাম যেন রহিমের পর তোমার নামটি অনিবার্য
ধারাবাহিকতা, যেমন ধারাবাহিকতা তৈরি হয়েছিল রাষ্ট্রের সাথে। তোমাদের রিক্সার অনন্ত
গতির স্পোকের সাথে নিজেকে বেঁধে নিয়ে আমি তোমার পায়জামার নিচে ইঁদুর দেখতে পাই।
শুনতে পাই, তুমি স্বপ্নবান হয়ে উঠছো ইঁদুরীয় প্রযোজনায়। আর তোমার মুখে আমি ইঁদুরীয়
ভাষা শুনতে পেয়েও আর অবাক হই না। এর ফলে তোমার নাম আমি যতই কালো কালিতে লিখি ততই
কেন যেন লাল হয়ে ভেসে ওঠে। যেভাবে আমি একসময় রাষ্ট্র শব্দটিকে যতই কালো কালিতে
লিখতাম, তা লাল হয়ে উঠতো। শেষ পর্যন্ত কালো কালির সম্ভ্রম ও পবিত্রতার কথা ভেবে
‘রাষ্ট্র’ শব্দটি অনেকদিন আমি লাল কালিতে লিখি আর তোমার নাম ইদানিং।
প্রচ্ছদ
ও নামলিপি : গৌতম ঘোষ
মুদ্রণ
: কালের ডাক অফসেট প্রেস, চকবাজার, শেরপুর।
Kenneth Lumpkin
Kenneth Lumpkin is an educator,
writer, poet, musician, freemason and activist. He has published four
collections of poetry to date: “Gather the Ashes”, 1984, winner of the Louis
Ginsberg Memorial Fellowship from the Chaucer Guild, “Song of Ramapough: A
Poetics of Place”, 2016, “Love
Lake”, 2017 and “God Has
Many Names” 2018. He teaches anthropology online through two New Jersey state universities and resides in
London, Ontario
with his wife, Kim and cat, Nala.
Two poems by Kenneth Lumpkin
Meridians
are certain lines
through the body
they are pathways
of energy: qi
or what a map maker
places on the body
of his map:
itself
not being the territory
and not merely
a map
but the pathways
we are to follow
if we are to mind
our Meridians
A Dutch
woodcut:
two men
at table
the universe
before them
underneath
a dog sleeps
in a pool of
exhaustion
it’s summer
the church
bells are
silent„
Dr. A. V. Koshy
Dr. Koshy A. V. is an Assistant Professor at the
Department of English at the College for Arts and Humanities for Girls, Jazan University,
Kingdom of Saudi Arabia.
His available works are:
1. Figs by KAY (Self-published collection of poetry)
2.2 Phases: 50 Poems with Gorakhnath Gangane (poetry) {available on blurb.com) 3. Soul Resuscitation/Allusions
to Simplicity with Angel Meredith (poetry)
(available on lulu.com) 4. Wrighteings: In Media Res with A.V. Varghese (a
monograph of essays) published by LLAP Germany (available on amazon) 5.The Art
of Poetry (Available on Flipkart and www.authorspress.com) 6. Samuel Beckett's
English Poetry: Transcending the Roots of Resistance (Available on flipkart and
www.authorspress.com) 7. A Treatise on Poetry for Beginners (avaialble on
createspace and amazon and smashwords in ebook and kindle and print formats).
He is a Pushcart Poetry Prize nominee (2012).
Experimental literature by Dr. A. V. Koshy
While this is a very broad term I
would like to talk of it from the point of view of asemic writing and
movements, artists and works of art connected with it.
What exactly is asemic writing?
It is writing that basically tries to have no meaning and to reach this place
of letting only the reader make sense of it fully the writer often has to
resort to doing away with language, meaning the
letters of the alphabet. However asemic writing is not something that
has no aesthetic element attached to it which is often brought through the
visual element. Now quite an old form of experimentation having begun in 1997
where the word was first used by Jim Leftwich and Tim Gaze who were visual
poets. However now Leftwich prefers “pansemic”.
Travis Jeppesen, an American writer and artist, also finds the term asemic problematic. However we can
broadly say that both in having a lineage and becoming a world wide art
phenomenon asemic writing matters. Its main qualities seem to be “abstract
calligraphy, wordless writing, and verbal writing damaged beyond the point of
legibility.”1
More interesting that asemic
writing is the whole set of connections that circle it in the past and
simultaneously and in its history till today. Though it can be traced back to China and Japan, modern
precursors whom we find more interesting are Lawrence Sterne who introduced
asemic lines in his famous novel Tristram Shandy (1759). Other great artists
who have dabbled in it and are noteworthy for us include Henri Michaux, Man
Ray, Wassily Kandinsky and Roland Barthes with his Contre-écritures.
Asemic writing is connected to
false writing systems like that of Tolkien who invents a language for the elves
in his Lord of the Rings and other books that is then given meaning to by him.
This has been tried out by artists inventing false ideograms, hieroglyphs,
pictograms etc., but systemic in the output, though of no meaning, with the
intention being that meaning should be filled in, if one wants to.
Asemic writing has been connected
to nature, apophenia, artist’s books, logograms, glossolalia, scat singing,
letter abstracts, lettrisme by letterists as part of hypergraphy, visual
poetry, sound poetry, concrete poetry, mumble rap, architectural ingredient,
design ingredient, personal spirit writing, anti-writing, abstract calligraphic
graffiti, sigils etc.
It is primarily a Western world
phenomenon having followers in America,
Canada,
and Europe etc., which does not mean it has no value.
The ability of asemic writing and
of modes of experimentation connected to it like Vispo (visual poetry) to
succeed is more about the interaction between itself and the reader or viewer
as to whether it has an energy that the one at the receiving end feels and
feels in being in a participatory creative flow in asking himself what the work
means to him and ascribing meaning to it and making it thus his own.
Edward Lucie Smith was a
forerunner in England.
On fb Volodymyr Bilyk and the group
Asemic writing: The new post-literate which has in it members like Michael
Jacobson keep the asemic flag flying high. The need to unmean is as strong as
the need to mean so experimental writing in the form of the asemic or pansemic
or its associates will not die out but has come to stay or remain with us.
Nabina Das
A Few Notes By Nabina Das
All literature is experimental if
you look at the approaches each writer has. Even within traditional frameworks
of fiction and poetry, experiments are always ongoing on the level of words and
sentences, and ideas and themes. Just to call something experimental for the
heck of it baffles me. As a writer, it's not a label I'd adopt.
By the same logic, it's futile in
my view, to discuss what the West-East angle is in 'experimental' literature.
As much as we wonder at what James Joyce did for "Ulysses" --
experimental for his times -- we must wonder at the quirky grace of Vikram
Seth's "The Golden Gate", written in a later time and age, for being
"experimental" in storytelling. Experimentally speaking, Jules Verne
took us on a whirlwind trip as Western colonial projects were taking hold,
while our own folklore and tales have liberated us through their magical
renderings from time immemorial.
From Beckett to Bolaño to
Apollinaire to Adichie, for all genres, the text has always found
representation in variegated ways. In South Asia,
oral literatures from Dalit and Tribal communities, as well as the essence of
the Urdu Dastangoi, are all experiments that test new and old mores, sans the
modernist baggage of 'experiments'.
One can of course argue that
there's genre-bending work. And hence, experimental. Maggie Nelson's
"Bluets" -- I admit having read only excerpts, and am picking it up
now as I write -- offers the grain's eye view of the insides of a
mother-of-pearl shell where the very term 'experimental' would fail to be a
tribute to the fluid writing which sweeps effortlessly between poetry and
prose. Very recently, Joanna Walsh's novel "Break.Up" created some
stir and has been said to be challenging genre boundaries. If this is
experiment in the age of digital realities -- the latter expression itself a
hyperbole -- then Walsh and others are indeed aiming for a different
re-telling. Poetry can adopt or adapt to prose, SFF can (and should, why not)
come with social commentary, and romance be told in graphic and other hybrid
forms. This way, experiments take place in form, craft, and themes. What is
experimental in spirit can become popular. The popular can aspire to be experimental.
As a poet, especially, I don't see the need for any compartmentalization.
No comments:
Post a Comment