আমার প্রথম
দুটি বই হ্যান্ড
কম্পোজে লেটার প্রেসে ছাপা হয়েছে। আমরা
লিটল ম্যাগ অর্থাৎ ছোট কাগজ
বের করতাম একই ভাবে। তা কিন্তু খুব একটা
বেশি দিন আগের
কথা নয়। আশি
দশকের শেষে এবং
নব্বই দশকের শুরুতে হ্যান্ড কম্পোজ আর লেটার
প্রেসের রাজত্ব ছিলো। হঠাৎ
করেই রাতারাতি প্রযুক্তিগত কারণে লেখালেখি এবং মুদ্রণ
জগতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটলো। বদলে
গেলো মুদ্রণের পদ্ধতি এবং প্রক্রিয়া। বদলে
গেলো লেখালেখির চালচিত্র। হাতের
লেখা কালি-কলম, পান্ডুলিপির স্থান দখল করলো
কম্পিউটার। হাতে
লেখার চিঠির ভিন্ন ভিন্ন বৈচিত্র্যকে তাড়িয়ে এলো ইমেল।
একই ভাবে আমাদের দৈনিক পত্রিকাগুলোতে সাংবাদিকরা নিউজ প্রিন্টে
লিখতেন, কম্পোজিটরেরা হাতে
হাতে সাজাতেন, পায়ে পারা দিয়ে গ্যালি প্রুফ দিতেন। আর তা ছাপাও হতো অদ্ভুতভাবে। কোনো কোনো শিরোনাম
তো কাঠের ব্লকে বা জিংকের
ব্লকে ছাপা হতো।
এসব এখন জাদুঘরের সম্পদ।
আমাদের সময় শুধুমাত্র দৈনিক পত্রিকার সাপ্তাহিক সাহিত্য পাতা লেখালেখির
প্রকাশের একমাত্র অবলম্বন ছিলো। প্রকাশনায়
প্রযুক্তি যুক্ত হওয়ায় এখন লেখা
প্রকাশের মাধ্যম বহুমাত্রিক। ফলে
দৈনিক পত্রিকার সাহিত্য সাময়িকীও পেলো নতুন
মাত্রা অর্থাৎ একই সাথে
প্রিন্ট ভার্সন এবং অনলাইন
ভার্সন। এই সুবর্ণ সুযোগে পাঠক পেয়ে
গেলো সোনার হরিণ। ঘরে
বসে, বা বাইরে বসে অর্থাৎ
পৃথিবীর যে কোন
প্রান্ত থেকেই গুগোলের সাহায্যে পড়তে পারছেন
বই, পত্রিকা,
জানতে পারছেন খবরাখবর এবং আরো
অনেক কিছুই। আর প্রযুক্তির কারণে লেখক জীবনেও
এলো আমূল বৈপ্লবিক
বিবর্তন।
আমরা এই পরিবর্তনের সন্ধিঃক্ষণের স্বাক্ষী।
এতো কথা লেখার মূল উদ্দেশ্য; ওয়েবম্যাগাজিন তথা ওয়েবসাহিত্য। এ এক জাদুকরী
ব্যাপার। কুড়ি
বছর আগেও ভাবা
যায়নি যে, এভাবে অনলাইনে ম্যাগাজিন হতে পারে। প্রিন্ট
ভার্সনে ৪/৫ শ’ ছাপা হয় কিনা সন্দেহ। আর তার পাঠকও সীমিত। কিন্তু
অনলাইনের পাঠক সীমাহীন
এবং সারা বিশ্বে
পাঠক ছড়ানো। ফলে
অনেকে পুরনো বা আভিজাত
পত্রিকা ছাপানোর পাশাপাশি অনলাইনে প্রকাশ করে। যেমন
ধরা যাক, বারীন ঘোষাল এবং কমল চক্রবর্তী
সম্পাদিত ‘কৌরব’
বের হতো ভারতের
জামশেদপুর থেকে। সেই
কৌরব এখন অনলাইনেও
আত্মপ্রকাশ করছে। তেমনি
আমাদের প্রতিটি দৈনিক পত্রিকার সাহিত্য পাতাও অনলাইনে প্রকাশ হচ্ছে। এখন
অনেক লেখক নিজের
ওয়েবসাইট করছে। রয়েছে
বিদেশি সাহিত্যের ওয়েব সাইট
বা ওয়েবম্যাগ। এ এক বিস্ময়কর ব্যাপার, হাতের মুঠোর মধ্যে সারা বিশ্ব।
ওয়েব ম্যাগাজিনের ভালো দিকগুলো হচ্ছে-
১]
খরচ কম,
২]
এর পাঠক সারা
বিশ্বে,
৩]
লেখা যখন-তখন
এডিট বা পরিবর্তন, পরিবর্ধন করা যায়,
৪]
লেখা মন্তব্য বা সমালোচনা
সুযোগ থাকে,
৫]
জায়গা বা পরিসরের
প্রয়োজন নেই,
আর নেতিবাচক দিক হচ্ছে- ঘরে বসেই কাজটি করা যায়
বলে অনেকেই ওয়েবম্যাগাজিন করছেন। যার
বেশির ভাগ দুর্বল
লেখা, বাজে লেখা, গার্বেজ। অপাঠ্য। তারা সম্পাদনার ‘স’-টাও জানে না। তবু একশ্রেণীর লেখক এভাবেই ‘ লেখক’ হয়ে উঠেন!
এই সাথে যুক্ত করা যায়, ফেইসবুকে সাহিত্য চর্চা। সেখানেও
ভয়াবহ অবস্থা। বিশেষ
করে মেয়েদের লেখায় চরম চিত্র
পাওয়া যায়। একটি
মেয়ে যদি একটি
কবিতা নামে কিছু ‘প্যাঁচাল’ পোস্ট দেয়; সাথে সাথে
চিল-শকুনের
মতো ফেইসবুকারেরা ঝাপিয়ে পড়ে- বাহ,
ওয়ান্ডারফুল, বিউটিফুল, অসাধারণ, অপূর্ব, দারুণ,
অতুলনীয়, চমৎকার,
শুভ কামনা, অভিনন্দন, মুগ্ধ,
Excelelnt, OWO লিখতে লিখতে প্র্রশংসার প্লাবনে ভাসিয়ে ফেলে। ইদানিং এর সাথে যুক্ত হয়েছে- ফেইসবুকের লাইভ। এখন অনেকেই লাইভে ‘সাহিত্য’ করেন। ফলে রুচি, গুণগত মান, উপস্থাপনা, উচ্চারণ, শিল্পবোধের বালাই নেই।
Excelelnt, OWO লিখতে লিখতে প্র্রশংসার প্লাবনে ভাসিয়ে ফেলে। ইদানিং এর সাথে যুক্ত হয়েছে- ফেইসবুকের লাইভ। এখন অনেকেই লাইভে ‘সাহিত্য’ করেন। ফলে রুচি, গুণগত মান, উপস্থাপনা, উচ্চারণ, শিল্পবোধের বালাই নেই।
যদিও সাহিত্যের আবর্জনা দূর হয়ে
প্রকৃত সাহিত্য বেরিয়ে আসবে। সেজন্য
প্রকৃত সাহিত্যকর্মী এবং সাহিত্যচর্চাকারীদের এগিয়ে আসতে হবে। লিটল
ম্যাগাজিন যেমন বিকল্প
ধারা তৈরি করে; সেই ভূমিকা নিবে ওয়েব-ম্যাগ তা আমার
কাছে বাস্তবস্বপ্ন।
No comments:
Post a Comment