কাজী
জহিরুল ইসলামের মতে
ক্রিয়াপদহীন কবিতায় ক্রিয়াপদ না থাকার ফলে কবির চেয়ে পাঠকের ভূমিকা বেশি। পাঠকের
ভাবনার দিগন্ত অধিক প্রসারিত। অনেক কথা অপ্রকাশিত এবং অমীমাংসিত প্রশ্নের সুস্পষ্ট
ইঙ্গিত রয়েছে। এতে করে পাঠক কবিতাকে নিয়ে খেলতে পারেন। কখনো কখনো পাঠক বিভ্রান্তও
হন। পাঠককে বিভ্রান্ত করা আধুনিক কবিতার একটি বড় কাজ। ক্রিয়াপদহীন কবিতায় সেই কাজ
করার সুযোগ বেশি। এটি একটি কারণ। অন্যটি হচ্ছে নতুনের অনুসন্ধান। নতুন কিছু করার
প্রয়াস। আশা করি এই নতুন প্রয়াস বাংলা কবিতার পাঠক সানন্দে গ্রহণ করবেন।
কাজী
জহিরুল ইসলাম-এর কবিতা
নির্জন
সন্ধ্যায় কোলের ওপর একটি ঝরা-ম্যাপল পাতা
এর
মধ্যে, এই একটি ঝরা-ম্যাপল পাতা, হলুদাভ, এর মধ্যে এতোকিছু!
এতো
হুলুস্থুল, এতো শৈশব, কৈশোর এতোখানি! দূরের ধুলপবন গ্রাম!
দুপুরের
বিষণ্ন
গলি, শহরতলী,
স্কুল
পালানো সিনেমা হল, আনন্দ-তীর্থ, মধুমিতা কিংবা অভিসার!
অন্তরীক্ষ-যুদ্ধে
সহসা বিদীর্ণ মেঘেদের আর্তচিৎকারে প্রোজ্জ্বল
বিদ্যুৎরেখার
মতো শিরা-উপশিরা,
বর্ষার
প্রথম বজ্রপাত, মৃত্যুর উত্তেজনায় কৈ-মাছের কানকো-ভ্রমণ, দূর খাগাতুয়ায়।
অথবা
সাতাশ নদীর হঠাৎ কলধ্বনি, দিগ্বিদিক, এই ম্যাপল-মানচিত্রে,
ম্রিয়মান
আজ, লোভের পলিতে কারো কারো আত্মাহুতি,
তবুও
সেই হর্ষধ্বনি, জলবৃত্ত, শিশুদের নিজস্ব পদ্মা-মেঘনা খেলা, অম্লান, এই
ম্যাপল-রেখায়
কী
মসৃণ ত্বক, কী মসৃণ!
দূর
মধ্যপ্রাচ্যে, সেমেটিক নারীদের স্তনের স্পর্শ, গনগনে প্রেম,
আরও
কত কথা, কত, কত কিছু তার একান্ত গোপন
এই
নির্জন সন্ধ্যায় কোলের ওপর একটি ঝরা-ম্যাপল, অর্ধশতাব্দীর সঞ্চিত গুপ্তধন।
প্রায়ান্ধ
সময়
ফ্রস্টেড
দুপুর,
সময়টা
এখন প্রায়ান্ধ; বোধ-সীমার বাইরে সভ্যতা, যুক্তি-প্রযুক্তি ও প্রকৃত মুক্তি
কৃষ্ণাঙ্গ
নারীর চোখে মেঘলা আকাশ, বর্ধিত সংশয়।
ছাতার
বৃত্তের ভেতর বেয়াড়া-বৃষ্টি
আতঙ্ক,
আতঙ্ক পথে পথে, মসজিদ-রোডে, টুপি-দাড়ি, বিশ্বস্ত জায়নামাজে।
সন্ধ্যার
সুবর্ণ ক্লান্তি অভিবাসী পায়ে, লক্ষ্যহীন দৃষ্টির আঘাতে ক্ষত দ্বিধার দেয়াল।
জেএফকে’র
টার্মিনালে তবুও প্রতিদিন ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ-মৃগেলের ডাউনলোড,
এশিয়া,
আফ্রিকা, ল্যাটিন ও পূর্ব-ইওরোপের হামাগুড়ি, পাগলা হাবুবের মতো জনস্রোত।
ফ্রস্টেড
দুপুর, প্রায়ান্ধ সময়;
এক
চিলতে বিকেল, অনাগত, গাবানি-ডোবার ঘোলা জল;
এরপর,
এরপর সন্ধ্যা, প্রগাঢ় অন্ধকারের দূত, এই অদ্ভুত শহরে।
No comments:
Post a Comment